টুহা

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০২০)

মোঃ আব্দুল মুক্তাদির
  • ৬৩
সাল ২০৫০। গভীর রাত। আলোকা শহরের ৫৭৩ নম্বর জোনের স্টেডিয়ামের উপরে কয়েকবার চক্কর দিল বিরাট গোলাকৃতির এক ফ্লাইং ভেহিকল। স্টেডিয়ামের একজন কর্মী নিজের ঘরে তখনও রাত জেগে বই পড়ছিলেন। এই বই এখনকার মত কোন স্ক্রিন-বুক নয়। রীতিমত আগের দিনের কাগজে ছাপা বই। পৃষ্ঠাগুলো কিছুটা ফ্যাকাসে হলেও পড়তে তার মন্দ লাগছে না। তিনি পড়ছেন আর ভাবছেন আগের দিনের মানুষ এসব কাগজের বই কত কষ্ট করে হাতে ধরে নিয়ে পড়ত! তার সমস্ত মনোযোগ বই এর ভিতর। এমন সময় কিছু একটার শব্দে তার মনযোগে ব্যাঘাত ঘটল। মনে হল স্টেডিয়ামের ফাঁকা মাঠটার ভিতর ভারি কিছু পড়ার মত শব্দ হল। এত রাতে কিসের শব্দ?! তিনি বই বন্ধ করে জানালা দিয়ে উঁকি দিলেন। তাজ্জব ব্যাপার! মাঠের মাঝখানে কে যেন বিরাট গোলাকৃতির ফুটবল বসিয়ে দিয়েছে!। বলটির উচ্চতা আনুমানিক ২০ ফুট হবে। রাতারাতি এই বিরাট বল কোথা থেকে আসল?! তিনি মাঠের নিরাপত্তাকর্মীদের জানালেন বলটার কথা। মুহূর্তে রাতের পাহারারত গোটা স্টেডিয়ামের কর্মীদের কাছে পৌঁছে গেল খবরটা। জ্বলে উঠলো চার প্রান্তের ফ্লাড লাইট। রাতের আঁধারে থাকা স্টেডিয়ামে দিনের আলো ফুটে উঠল। নিজেদের মাঝে আলাপচারিতা সেরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা হল। একটু পরে স্টেডিয়ামের ৮ জন সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী অস্ত্র উঁচিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল বলটার দিকে। একজন ঘোষণা দিলেন, 'ভিতরে যে আছ জলদি বের হয়ে আস। আমরা তোমাদের ঘিরে ফেলেছি।'
ঘটে গেল আবার এক কাণ্ড! ভিতর থেকে বের হয়ে আসল ঠিকই, তবে সেটা কোন মানুষ নয়, একটা লাল রশ্মি!। লাল রশ্মি আঘাত করল ফ্লাড লাইটগুলোকে! মুহূর্তে সব লাইট চুরমার হয়ে গেল। আবার অন্ধকারে ডুবে গেল স্টেডিয়াম। বিস্মিত নিরাপত্তাকর্মীরা চারিদিক থেকে বল লক্ষ করে গুলি ছোটাল শেষ পর্যন্ত। গুলি শেষ হলে আবছা আলোতে তারা দেখতে পেল আটটা হেভি গানের এতগুলো গুলি খেয়েও বিরাট বলটার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাপরে! এটা কি কোন দানব নাকি?! নিরাপত্তাকর্মীরা অস্ত্র ফেলে ঘরের দিকে দৌড় দিল। স্টেডিয়ামের সকল ঘরের দরজা জানালা বন্ধ হয়ে গেল। সবাই ঘরে বসে সেনাবাহিনীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

লেখক জাবির রায়হান পরদিন সকালে বসার ঘরের ওয়াল স্ক্রিনে নিউজটা দেখেই কৌতূহলি হলেন।
"গভীর রাতে আলোকা শহরের স্টেডিয়ামে রহস্যময় বলের আগমন। নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিকে পরাস্ত করে স্টেডিয়ামে অনড় অবস্থান। মেয়র শহরে জরুরি নির্দেশ ঘোষণা করেছেন। ৫৭৩ নম্বর জোনের স্টেডিয়ামে জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে কোন সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী স্টেডিয়ামে বিরাট বলের আকৃতির যান নিয়ে প্রবেশ করেছে। সেনাবাহিনী উক্ত যান আর যানের আরোহীদের ধরতে কমান্ডো অভিযানে নেমেছে। এই পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। স্টেডিয়ামের ঘরগুলোতে আটকা পড়া সকল ব্যক্তিকে বাহিরে আনা হয়েছে।"

বিকেলবেলা জাবির রায়হান আবার ওয়াল স্ক্রিন অন করলেন। এই মাত্র প্রাপ্ত খবর-
"বিরাট গোলাকৃতি বলের লাল রশ্মির আঘাতে ৯জন কমান্ডো সেনার মৃত্যু ঘটেছে! অভিযান পরিচালনা করার সময় উক্ত বলের ভেতর থেকে লাল রশ্মি বের হয়ে কমান্ডোদের আঘাত করে। আহত কমান্ডোরা বের হয়ে আসার পরে হাসপাতালে নিলে তাদের মৃত্যু ঘটে। মেয়র সাহেব অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেছেন। শহরে জরুরি অবস্থা জারি। নাগরিকদের ঘরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।"

জাবির সাহেব নিজের ছাদে বসে আছেন। রাতের বেলা ঝিরঝিরে হাওয়ার অনুভূতি বেশ লাগছে তার। পরিবার পরিজন সবাই বেড়াতে গেছে। তিনি একা একা বসে থেকে ভাবছেন আগের দিনগুলোর কথা। এমন সময় ছাদের অ্যালার্ম টোন বেজে উঠলো। তার ছাদের সীমা অতিক্রম করে ফ্লাইং ভেহিকল নিয়ে কেউ ঢুকেছে! তার ছাদে তো বিশেষ ঐ আলো দেয়া আছে। কোন সাধারণের ফ্লাইং ভেহিকল তো এখানে ঢোকার কথা না। তিনি হেঁটে এগিয়ে গেলেন। দেখলেন ছাদের উত্তরের কোণে মানুষের মত দেখতে দুইজন দাঁড়িয়ে আছে!। মাথায় চুল নেই, উচ্চতা চার ফুটের মত হবে, চোখদুটো মানুষের চেয়ে কিছুটা বড়। জাবির সাহেব বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এসব কি হচ্ছে?
একটু পরে মানুষ দুজন তার কাছে এসে দাঁড়াল। জাবির সাহেব বিস্ফোরিত নয়নে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তাদের একজন তার কপালে হাত রাখল। তিনি ঘুম ঘুম অনুভব করলেন।

স্থান আলোকা সিটির স্টেডিয়াম। বিরাট বলটার ভিতরের একটা কক্ষের বিছানায় শুয়ে আছেন শহরের খ্যাত লেখক জাবির রায়হান। তার ঘুম ভেঙেছে। তিনি চোখ মেলে দেখলেন বিছানায় শুয়ে আছেন। ঘরটা তার অপরিচিত। তার মনে পড়ল মানুষসদৃশ সেই দুজনের কথা। তিনি বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে গেলেন। দরজা ঠেললেন। দরজা বন্ধ। তিনি বুঝতে পারলেন তিনি বন্দী! আবার বিছানায় এসে বসে পড়লেন। তার পক্ষে আর কিছুই করার নেই। রাতে তার খাওয়া হয়নি। এখন কয়টা বাজে তাও বোঝা যাচ্ছে না।এরা খেতে দেবে কিনা কে জানে? পরিবারের সবাই নিশ্চয় কাল বাড়িতে ফিরে তার জন্য চিন্তা করবে।
কিছু একটার শব্দে জাবির সাহেব চিন্তার জগত থেকে সরে এলেন। পায়ের দিকের দেয়ালে স্ক্রিন ভেসে উঠেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে ছাদে দেখা সেই মানুষদের মত চার জনকে। এরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। তার দিকে মুখ করে একজন কি যেন বলছে, তবে এদের ভাষা লেখক সাহেব ধরতে পারলেন না। তবে বুঝতে পারছেন এরা তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলছে। তারা কথা বলেই যাচ্ছে, কিন্তু জাবির সাহেব চুপ করে আছেন।
একটু পরে তিনি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে হাত-মুখ-কান দিয়ে ইশারায় বোঝালেন, 'আমি বুঝতে পারছি না।'
অতপর কিছুক্ষণ তারা সবাই চুপ মেরে গেল। তারপর নিজেদের মাঝে আলাপ করতে লাগল। একটু পরে স্ক্রিন বন্ধ হয়ে দেয়াল স্বাভাবিক হয়ে আসল। ঘরের দরজা খুলে গেল। সেখান দিয়ে একজন তাকে হাতের ইশারায় ঘরের বাহিরে আসার নির্দেশ দিল। জাবির সাহেব ঘর থেকে বাহিরে বের হয়ে দেখলেন এটা একটা বিরাট জায়গা। দেয়ালে সারিসারি স্ক্রিন লাগানো আছে। সেগুলোতে দেখা যাচ্ছে আলোকা শহরের স্টেডিয়ামের বিভিন্ন জায়গার ছবি। তিনি বুঝতে পারলেন এটাই নিউজের সেই বিরাট বলটা আর এরা তাকে এখানে এনে বন্দী করেছে। কিন্তু এরা তার কাছে কি চায়? ওদের নির্দেশ পেয়ে একটা চেয়ারে বসলেন তিনি। তার সামনে আনা হল কম্পিউটারের মত দেখতে একটা স্ক্রিন। তাকে ঘিরে আছে চারজন। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো অনেকগুলো ভাষার নাম। তিনি বুঝতে পারলেন এরা তার সাথে নিজের ভাষায় যোগাযোগ করতে চাইছে। তিনি খুঁজে খুঁজে বাংলা সিলেক্ট করলেন। এবার স্ক্রিনে তাদের একজনের মুখ ভেসে উঠলো এবং তার নিচে বাংলায় লেখা উঠল----অতিথি তোমাকে স্বাগতম।
জাবির সাহেব অনেকদিন পরে এমন ভাষা শুনে চমৎকৃত হলেন। আজকাল এমন ভারিক্কি শব্দ কেউ আর ব্যবহার করেনা। তিনি স্ক্রিনের দিকে দেখলেন সেখানে কীবোর্ড উঠেছে। তিনি রিপ্লাই দিলেন----
-আপনাদেরও স্বাগতম। আপনারা কে?
এবার শোনা গেল আবার আগের মত দুর্বোধ্য ভাষায় স্ক্রিন থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে স্ক্রিনটা দোভাষীর কাজ করছে। তাদের মুখে কিছুটা আনন্দের আভাস দেখা গেল। তাদের পরিকল্পনা কাজ করেছে। স্ক্রিনে আবার বাংলাতে ভেসে উঠল-----
-আমাদের তুমি চিনবে না। আমরা পৃথিবীর বাইরে থাকি।
-তোমাদের আমি কি বলে ডাকতে পারি?
-টুহা বলে ডাকতে পার...
-আচ্ছা মিঃ টুহা আপনারা আমাকে ধরে এনেছেন কেন?
-মিঃ আবার কে? আমি টুহা-২২
-ওকে টুহা-২২...
-আমরা তোমাকে আমাদের কিছু কথা বলার জন্য এনেছি।ধরে আনিনি তো
-কি কথা?
-আমরা এখানে কিছুদিন থাকব।
-আপনারা এই স্টেডিয়ামে থাকবেন, তো আমাকে বলছেন কেন? আলোকার মেয়রকে বলেন...
-সেটা আবার কে?
-এখানকার প্রধান...
-সেটা আবার কি?
-মানে গুরু, বস, চিফ এই জাতীয়...
-সে কোথায় থাকে?
-সিটি প্যালেসে
-আমরা তাকে কিভাবে পেতে পারি?
-যেভাবে আমাকে পেয়েছেন...
-সে কি আমাদের বন্ধু?
-না তা না...তবে আমি কি আপনাদের বন্ধু?
-তাই তো
-কিভাবে?
-কেন তুমিই তো তোমার বাড়ি থেকে লাল রশ্মি দ্বারা আমাদের বন্ধুত্বের সিগন্যাল দিচ্ছিলে?
জাবির সাহেব বুঝতে পারলেন তার ছাদে লাগানো চারটি লাল রশ্মিকে এরা বন্ধুত্বের সিগন্যাল ভেবেছে। এদেরকে এখন কে বোঝাবে, তিনি এটা করেছেন, যাতে করে কেউ তার ছাদের উপর দিয়ে ফ্লাইং ভেহিকল না চালায়। এরা তো বলছে পৃথিবীর বাহিরে থেকে এসেছে। এখন আসল সত্যি বললে তাকে ছেড়ে দেবে না মেরে ফেলবে কে জানে। এরা যখন তাকে বন্ধু ভেবেছে তখন বুদ্ধি করে এদের হাত থেকে পালাবার উপায় বের করতে হবে। তিনি বললেন---
-কিন্তু তোমরা পৃথিবীতে কেন এসেছ সেটা তো বললে না?
-আমাদের গ্রহ বিষাক্ত গ্যাস আর বায়ুতে ভরে যাচ্ছে। আমরা ওখানে বেশীদিন থাকতে পারব না। আমরা চেষ্টা করছি পৃথিবীতে বসবাস করার। তাই এখানে এসে নিজেদের অভিযোজন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যদি আমরা সফল হই তাহলে পৃথিবীতে আমাদের বংশবৃদ্ধি ঘটবে।
-কিন্তু আমি তো জানি পৃথিবীর বায়ুও দূষিত হয়ে যাচ্ছে।
-কিন্তু আমরা তো দেখছি এখানকার বায়ু ওখানকার চেয়ে শোধিত।
-এটা কি তোমাদের মিটারে পরিমাপ করা?
-হ্যাঁ। তবে পৃথিবীর তাপমাত্রা কিছু অসুবিধার। আমরা সেটাকে জয় করার চেষ্টায় আছি। আশা করছি আমরা সফল হব।
-আপনাদের সাথে অনেক কথা তো হল, আমি কি এখন আমার বাড়িতে যেতে পারি?
-অবশ্যই বন্ধু। যখন আমাদের প্রয়োজন পড়বে, তোমাকে ডাকব ঠিক আছে?
-আচ্ছা..., মিঃ... টুহা-২২, আমি কি আপনাদের সাথে একটা ছবি তুলতে পারি?
-তুলুন

জাবির সাহেব বিরাট বলের ভিতর থেকে বের হয়ে আসলেন। স্টেডিয়ামের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে দেখলেন বলের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। উপরে তাকিয়ে দেখলেন একটা দোতালা বাড়ির সমান উঁচু বলটা। তিনি জানেন সেনাবাহিনী এই বলটার উপরে ২৪ ঘণ্টা নজর রাখছে। তাই এত সহজে তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন না। তিনি দুহাত উঁচু করে স্টেডিয়ামের দরজাগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। কোন দরজাই খোলা নেই। সব বাহিরে থেকে সেনারা বন্ধ করে দিয়েছে।
একটা দরজার সামনে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে চিৎকার দিলেন, 'দরজা খোলেন। আমি মানুষ আমি মানুষ। লেখক জাবির রায়হান।'
অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরে দরজা খুলল।
তিনি দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর দরজার বাহিরে এসেই দুহাত উঁচুতে তুলে চিৎকার দিলেন, 'আমি মানুষ! লেখক জাবির রায়হান, গুলি করবেন না! গুলি করবেন না।'
তিনি তাকিয়ে দেখলেন, কমপক্ষে ৫০টা হেভি রাইফেল তার দিকে তাক করা। তাকে বন্দী করে আলোকার পুলিশ হেড কোয়ার্টারে নিয়ে আসা হল।

১ দিন পর।
স্থান লেখক জাবির রায়হানের বাড়ি। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বসার ঘরে বিষণ্ণ মনে বসে আছেন জাবির সাহেবের স্ত্রী লিপি। ওয়াল স্ক্রিনে খবর চলছে। কিন্তু সেদিকে তার মন নেই। পরশু রাত থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও স্বামীর দেখা পাননি। কোন আত্মীয়দের বাড়িতেও যাননি। লোকটা যে সন্ধ্যা রাতে ছাদে ছিলেন এটা নিশ্চিত। তার কম্যুনিকেটর এবং ফ্লাইং ভেহিকল সেখানেই পড়ে আছে। কিন্তু মানুষটা নেই। লিপি সিদ্ধান্ত নিলেন কালকে পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করবেন। এমন সময় মেয়ের চিৎকার শুনে ওয়াল স্ক্রিনে চোখ দিলেন। সেখানে সচিত্র নিউজ পরিবেশন হচ্ছে----
"আলোকার খ্যাত লেখক জাবির রায়হান পুলিশের কাছে এক অদ্ভুত জবানবন্দী দিয়েছেন। তিনি দাবী করছেন আলোকার স্টেডিয়ামে পৃথিবীর বাহিরে থেকে সেই বলের মত আকৃতির যানে করে টুহা নামের পৃথিবীর বাহিরে থেকে মানুষের মত দেখতে প্রাণী এসেছে। এরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি কৌশলে বের হয়ে এসেছেন। এরা দেখতে অনেকটা মানুষদের মতই। তিনি এদের সাথে কিছু কথা-বার্তাও বলেছেন। তিনি বলছেন ওরা তাকে তার বাসার ছাদ থেকে অজ্ঞান অবস্থায় স্টেডিয়ামের ভিতরে সেই যানের ভিতরে নিয়ে গিয়েছিল। টুহা নামের প্রানীগুলো পৃথিবীতে এসেছে বসবাসের জন্য। বিস্তারিত আপডেট পরে জানানো হবে বলে পুলিশের কাছ থেকে জানা গেছে। আপাতত পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে লেখককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।"

তিনদিন পর।
আলোকার মাননীয় মেয়র, চিফ সিকিউরিটি অফিসার, আর্মি চিফ, বিজ্ঞানী ফজলুল হায়দার এবং ডাক্তার নিয়াজ মোরশেদ রুদ্ধদার বৈঠকে বসেছেন। তাদের সাথে কমুনিকেটরে যুক্ত হয়েছেন মাননীয় চিফ মিনিস্টার। বিজ্ঞানীকে কেউ কেউ আড়ালে পাগলা বিজ্ঞানী বলে ডাকে। তিনি সারা বছর কি কি সব এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সেগুলোর মাঝে দুএকটা খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়ে হাসির খোরাকে পরিণত হয়। তবে চিফ মিনিস্টার তার গবেষণাগুলোকে গুরুত্ব দেন। তাই আজকের এই বৈঠকেও তিনি উপস্থিত হয়েছেন। এখানে এসেই বললেন, 'ইসস লেখক সাহেবের বদলে তাকে ঐ বলের ভিতর নিয়ে গেলে অনেক কিছু জানতে পারতেন।' মেয়র সাহেব এই কথা শুনে মনে মনে বললেন, 'তাহলে ভালই হত। সব পাগল একত্র হয়ে স্টেডিয়ামে পাগলের মেলা বসত।' একটু পরে চিফ মিনিস্টার সাহেব কমুনিকেটর থেকে কথা বলে বৈঠক শুরু করলেন---
চিফ মিনিস্টারঃ লেখক সাহেবের কি খবর?
মেয়রঃ স্যার, উনি পুরো সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
চিফ মিনিস্টারঃ উনি যা বলছেন সেটা কি সুস্থভাবে বলেছেন?
ডাক্তারঃ স্যার, উনার মাথায় আমরা কোন প্রবলেম পাইনি?
চিফ মিনিস্টারঃ আমার ৯জন কমান্ডো মারা গেছে...এটা কি একটা সন্ত্রাসী কাজ নয়?
সিকিউরিটি অফিসারঃ স্যার, এটা অবশ্যই সন্ত্রাসী কাজ...
চিফ মিনিস্টারঃ লেখক সাহেবের কি ওদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
সিকিউরিটি অফিসারঃ স্যার, আমরা জাবির রায়হানের ব্যাপারে পুরো অনুসন্ধান করেছি। উনি একজন লেখক ছাড়া কিছু নন। উনার বিরুদ্ধে কোন পুলিশ রেকর্ডও নেই।
চিফ মিনিস্টারঃ তাহলে আপনারা বলছেন ঐ টুহাগুলো পৃথিবীর বাহিরে থাকে?
বিজ্ঞানীঃ স্যার, লেখক সাহেবের বর্ণনা শুনে তাই মনে হয়...
চিফ মিনিস্টারঃ তাহলে এদের আটকানোর উপায় কি? এরা ৯জনকে মেরেছে। এদেরকে এদেশে থাকতে দেয়া যাবে না। আর্মির প্রস্তুতি কেমন?
বিজ্ঞানীঃ আর্মির ওয়েপন ওদের কিছুই করতে পারবে না স্যার। ওদের লাল রশ্মি অনেক ক্ষমতাধর মনে হচ্ছে।
ডাক্তারঃ ওদের লাল রশ্মির আঘাতে যেসব সেনা মারা গেছে তাদের শরীর পরীক্ষা করে এমন পদার্থ পাওয়া গেছে যা আমরা এখনও আবিস্কার করতে পারিনি!
চিফ মিনিস্টারঃ বলছেন কি!? তাহলে কি উপায়?
বিজ্ঞানীঃ স্যার, উপায় আমি একটা ভেবেছি।
চিফ মিনিস্টারঃ কি?
বিজ্ঞানীঃ যেহেতু জাবির সাহেবের কথা আমরা সত্য বলে ধরছি, তারমানে টুহাদের এখানকার তাপমাত্রায় অসুবিধা হচ্ছে। আমার পরিকল্পনা আমরা যদি ঐ স্টেডিয়ামের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারি, তবে তারা এখানে থাকতে না পেরে এমনিতেই চলে যাবে।
চিফ মিনিস্টারঃ আপনার পরিকল্পনা খুব সুন্দর। কিন্তু ঐ স্টেডিয়ামের তাপমাত্রা বাড়াবেন কিভাবে?
বিজ্ঞানী আমরা বাহিরে থেকে বিদ্যুতের দ্বারা, আলোর দ্বারা স্টেডিয়ামের তাপ বাড়াতে পারি। তেমন বুঝলে আমার অন্য একটা পরিকল্পনাও আছে।
মেয়রঃ কিন্তু স্যার, যদি ওরা... এসব যারা করবে... তাদের আক্রমণ করে?
বিজ্ঞানীঃ আমি এর বুদ্ধি ঠিক করে রেখেছি। মাননীয় চিফ মিনিস্টার স্যার, আমার এই পরিকল্পনার কথা আমি আপাতত আপনি ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করতে চাইছি না।
বিজ্ঞানীর কথা শুনে সবাই পরস্পরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। কিন্তু চিফ মিনিস্টার নির্দেশ দিলেন। অতএব উক্ত ঘর থেকে সবাই ধীরে ধীরে বের হয়ে গেল। কেবল বিজ্ঞানী ফজলুল হায়দার চিফ মিনিস্টারের সঙ্গে একান্তে কিছু আলাপ চালিয়ে গেলেন।

এক সপ্তাহ কেটে গেল। সেদিন দুপুরবেলা। আলোকার স্টেডিয়ামের চারপাশে চারটি জলকামান সাজানো হয়েছে। ইলেক্ট্রিসিটি ডিপার্টমেন্টের চারটি হাই পাওয়ারহাউস ভেহিকল আনা হয়েছে। বিজ্ঞানী স্টেডিয়ামের এক কিঃমিঃ দূর থেকে একটা ঘরে বসে কমুনিকেটরের দ্বারা সবাইকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। তার সামনের ওয়াল স্ক্রিনে স্টেডিয়ামের ১৬টি অ্যাঙ্গেলের ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করা রয়েছে। সেই ঘরে আছেন চিফ সিকিউরিটি অফিসার, আর্মি চিফ, এবং আলোকার মেয়র। মেয়র সাহেব এখনও জানেন না, এই পাগলা বিজ্ঞানী চিফ মিনিস্টারের সাথে কি আলাপ করেছেন। কেবল তাকে নির্দেশ দেয়া আছে বিজ্ঞানীকে সাহায্য করতে। চিফ সিকিউরিটি অফিসার দাঁতে দাঁত চেপে আছেন। এই পাগলা বিজ্ঞানী নির্ঘাত আজকে পাওয়ার হাউজ আর জলকামানের ৮টা লোককে ঐ টুহাদের কাছে বলি দিবে!।
বিজ্ঞানী সকল ক্যামেরার দিকে একবার করে দেখে নিলেন। তারপর উপস্থিত সকলের দিকে একবার করে তাকালেন। তারপর কমুনিকেটরে কাকে কিসব নির্দেশ দিলেন। তারপর চিৎকার দিলেন, 'নাউ...মাই বয়জ, চাআআআআআআআআআআআরজ!'
বিজ্ঞানীর চিৎকারে সবাই কানে হাত দিল। মেয়র সাহেব মনে মনে বললেন, 'মুখের কাছেই মাইক্রোফোনটা থাকতেও পাগলাটা চিৎকার দিয়ে কান ঝালাপালা করে দিল।
বিজ্ঞানীর চিৎকারকে অগ্রাহ্য করে সবাই স্ক্রিনে দেখতে পেলেন ৮০০০০ ভোল্টের পাওয়ার হাউসগুলো বিকট গর্জন করে স্টার্ট নিয়েছে। সেগুলো থেকে ৩০টি করে বিরাট লাইট ক্রেনের সাহায্যে স্টেডিয়ামের ভিতর ঢুকে গেল।
১৫ মিনিট এভাবে রুদ্ধশ্বাসে কেটে গেল। এবার দেখা গেল ফ্লাইং ভেহিকল চেপে তিনজন টুহা স্টেডিয়ামে উপরে চক্কর দিচ্ছে। বিজ্ঞানী এবার চিৎকার দিলেন, 'নাউ...মাই ফ্রেন্ড, চাআআআআআআআআআআআরজ!'
বিজ্ঞানী এই কথা বলা মাত্রই উড়ন্ত তিন টুহা পাওয়ার হাউজগুলোকে লাল রশ্মি দিয়ে ধ্বংস করে দিল। একইসাথে চারটি জলকামানের ফুটন্ত পানি উড়ন্ত টুহাগুলোকে ভিজিয়ে দিল। টুহাগুলো চি চি করে নিচে নেমে গেল। সবাই দেখতে পেল বিজ্ঞানীর চোখ জ্বলজ্বল করছে। বিজ্ঞানী তার সামনে থাকা কীবোর্ডে পাগলের মত টাইপ করে চলেছেন!। এরপর দেখা গেল স্টেডিয়ামের দরজার দিকে এগোচ্ছে জলকামানগুলো। চারটি দরজা দিয়ে অবিরত গরম পানি ছুটে চলেছে বিরাট বলটার গায়ে। বিজ্ঞানী এবার কমুনিকেটর হাতে নিয়ে কাকে যেন কিসব নির্দেশ দিলেন। এরপর দেখা গেল আরও ৮টি জলকামান স্টেডিয়ামের দিকে এগোচ্ছে।

স্থান আলোকার স্টেডিয়াম। বিরাট বলের ভেতরে ভীষণ দুর্বল অবস্থায় পড়ে আছে টুহা-২৯। একমাত্র জীবিত টুহা সে। বলের ভেতর অন্য টুহাগুলো একে একে মারা গেছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা তাদের উপযোগী নয় এটা নিশ্চিত। এখন যেমন করেই হোক, এই যানটাকে এখান থেকে উড়াতে হবে। সে যানকে উড়ানোর কোডটা জানে না। কোড রিসিভারটাও নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের গ্রহ থেকে যে সিগন্যাল আসত সেটাও এখন বন্ধ। কেবল জায়ান্ট কোড মেশিনটা চালু আছে। তবে সে সিগন্যাল পাঠানোর কোডটাও জানে না। টুহা-২২ জানত। সে বেঁচে নেই। অনেক কষ্টে ধীরে ধীরে পা ফেলতে ফেলতে টুহা-২৯ যানের কোড ফাইলগুলো সার্চ করতে লাগল। কোনটাই কাজ করছে না। তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এমন সময় চোখ গেল এক কোডের নিচে লেখা আছে, 'জরুরি সাহায্য পেতে কেবিন ২২ খুলে দিতে হবে।' তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। কেবিন-২২ এর পাসওয়ার্ড অন্য সকলের মত সেও জানে। কোনমতে পা টেনে টেনে যানের এককোণে গিয়ে কেবিন ২২ এর পাসওয়ার্ড চেপে দিল। একটু পরে দেখল কেবিনের ভেতর কোন মেশিন ঘুরানোর শব্দ হচ্ছে। ধীরে ধীরে কেবিনের দরজা খুলে গেল। সেখান থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে এল এক রোবট। রোবটটা দাঁড়িয়ে থেকে আশেপাশে দেখে নিল। তারপর দুই হাতে করে টুহা-২৯কে তুলে একটা টেবিলে শুয়ে দিল। টুহা-২৯ বুঝতে পারল আগে থেকেই এই যানে এই জরুরি সাহায্যকারী রোবটকে বসানো হয়েছিল। বিপদের সময় যাতে কাজে লাগানো যায়। টুহা-২২ দারুন এক কৌশল খাটিয়েছেন। টুহা-২৯ মাথা ঘুরিয়ে দেখতে পেল রোবটটা ধীরে ধীরে কোড টাইপ করে চলেছে। একটু পড়ে একটু ঝাঁকি দিয়ে যানটা জায়গা পরিবর্তন করলো। তার মানে রোবটটা এই যানকে উড়াতে পেরেছে! ধন্য টুহা-২২ এর বুদ্ধি। কিন্তু নিজে সে বাঁচতে পারলনা।

বিজ্ঞানী ফজলুল হায়দার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখছেন বিরাট বলটা আকাশে উঠে যাচ্ছে। অনেকদূর চলে গেছে যানটা। তিনি দৌড়ে ছাদে চলে গেলেন। সবাই তাকে অনুসরণ করল। আকাশের সবদিকে যানটাকে খুঁজতে লাগলেন সবাই। কিন্তু কোথাও আর সেই যানটাকে দেখা যাচ্ছে না। সবাই খুশী হয়ে বিজ্ঞানীর দিকে তাকালেন। কিন্তু একি! তার চোখে জল!
বিজ্ঞানী বিড়বিড় করে বলছেন, 'ওয়েল ডান মাই ফ্রেন্ড ওয়েল ডান। গুড বাই মাই রোবট বয়জ, রেস্ট ইন পিস। তোমরা মানুষ হলেও আমার এত উপকার করতে না!...'

(সমাপ্ত)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Dipok Kumar Bhadra খুব সুন্দর লিখেছেন।
শিশির বিন্দু ভালো লাগলো। শুভ কামনা আগামীর জন্য।
ফয়জুল মহী বাহ্!সুনিপুণ গাঁথুনি

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

অন্য গ্রহের প্রাণী টুহাদের পৃথিবীতে আগমনের কাহিনি

১১ জুন - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪